Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রাণিসম্পদে ইঁদুরের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায়

প্রাণিসম্পদে ইঁদুরের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায়

ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান

 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ সেক্টর উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন অগ্রগতি বিশ্বের প্রথম ১০টি দেশের কাতারে এসেছে। ছাগলের মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আবার গরু পালনে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদের অবস্থান ১২তম।  প্রাণিসম্পদ জিডিপিতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। মাংস উৎপাদনে আমরা এখন স্বনির্ভর। কোরবানির জন্য আর কোনো দেশের উপর নির্ভর করতে হয় না। দেশে ব্রয়লার উৎপাদন চাহিদা মিটিয়ে এখন রপ্তানির পর্যায়ে পৌঁছেছে। করোনার কারণে খামারিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনা পেয়েছে খামারিরা। বাজারের অস্থিতিশীল অবস্থাসহ বেশ কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। এসবের মধ্যে ইঁদুরের উৎপাত একটি অন্যতম সমস্যা। এর কারণে প্রতি বছরে প্রাণিসম্পদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক।  ইঁদুরের বংশ বৃদ্ধি হার বেশি হওয়ায় এর দ্বারা ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। খাবার নষ্ট করা, খাবারের গুণগতমান নষ্ট করাসহ নানা রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে এই রোডেন্ট ইঁদুর। প্রাণিসম্পদের প্রায় সকল প্রজাতির জন্যই ইঁদুর অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে পোল্ট্রি পালনে এবং গবাদিপ্রাণি পালনে বেশি ঝামেলা সৃষ্টি করে।

খামারে ইঁদুর যেসব ক্ষতি করে থাকে

ইঁদুর যা খায় তার চেয়ে বেশি খাবার নষ্ট করে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ইঁদুর তার দেহের মোট ওজনের প্রায় ১০% ওজন পর্যন্ত ফিড খেতে পারে। একটি ইঁদুর দৈনিক প্রায় ২৫ গ্রাম খাবার খায় সে হিসেব করলে দেখা যায় বছরে ৯.১ কেজি খেয়ে থাকবে। একটি হিসেবে দেখা যায় যদি কোনো শেডে ২০টি ইঁদুর থাকে তাহলে বছরে প্রায় ০.১৮ টন নষ্ট হয়ে যায়। ইঁদুর যা খায় তার ৪-৫ গুণ খাবার নষ্ট করে আর মুরগি ও ডেইরি খামারে সেসব খাবার খায় না। এসব ক্ষতি খামারিদের পালনের খরচ বাড়ায় এবং আর্থিকভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়ে। ইঁদুর শেডের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করলে মুরগি ও গবাদিপশু  ভয় পেয়ে যায়। বিশেষ করে ডিমপাড়া সময়ে মুরগি ইঁদুর দেখলে আতঙ্কিত হয়ে যায়। প্রতিনিয়ত ইঁদুর মুরগির শেডে এভাবে চলাচল করলে ডিমপাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় ফলে অনেক সময় ডিম উৎপাদন কমে যায়। ডিম সময়মতো সংগ্রহ না করা হলে ডিম ভেঙে যাওয়াসহ নানা সমস্যা হতে পারে। বাচ্চার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলে অথবা তাদের গলাকেটে মেরে ফেলে। গবাদিপ্রাণির দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়।  ইঁদুর খামারে থাকলে বায়োলজিক্যাল দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বায়োসিকিউরিটি সমস্যা। অনেক খামারে অন্য প্রিডেটর না আসলে কোনো রোগের আউটব্রেক হওয়ার কারণ হতে পারে ইঁদুর। কারণ ইঁদুর প্রায় ৬০ ধরনের রোগবাহী জীবাণু বহন করে। ইঁদুর বিভিন্ন প্রজাতির রোগবালাই যেমন- সালমোনেলা, পাসচুরেলোসিস, মাইক্রোপ্লামোসিস, হেমরেজিক এন্টারাইটিস, হাইমেনোলপসিস, ক্যাপিলারিসিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, ট্রক্সোপ্লাজমোসিস, র‌্যাবিস এবং এসক্যারিয়াসিস প্রভৃতি জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত ইঁদুরের প্রস্রাব, বিষ্ঠা এবং চুল ফিডের সাথে মিশে সংক্রমণের কারণ হয়ে থাকে। এমনকি শেডের কর্মীদের মধ্যেও কিছু সংক্রমণ ছড়াতে সাহায্য করে এইসব ইঁদুর।

ফার্মে ইঁদুরের উপস্থিতি

খামারে ইঁদুর আছে তা সবসময় বোঝা যাবে না। তবে কিছু বৈশিষ্ট্য দেখলে সহজে বোঝা যায় খামারে ইঁদুর আছে। শেডের মধ্যে ইঁদুরের কিচ কিচ আওয়াজ, দেয়ালের নিচের দিকে কোনো ছিদ্র,  দেয়ালে উঠার শব্দ এবং ইঁদুরে ইঁদুরে ঝগড়া করা, ঘর বা গুদামে রক্ষিত ফিড ও অন্যান্য উপকরণ বস্তা কাটা দেখে,  ইঁদুরের বিষ্ঠা, নষ্ট করা ফিড বা অন্য কিছুর মধ্যে যদি ইঁদুরের বিষ্ঠা পাওয়া যায় তাহলে বুঝবেন আপনার খামারে ইঁদুরের রাজত্ব চলছে। দেয়ালের দুর্বল বা সংযোগ স্থানে ইঁদুর গর্ত করে তাদের বাসা বানায়, লুকিয়ে থাকে। অপেক্ষাকৃত অন্ধকার স্থানে তারা গর্ত করে। আবর্জনা মুক্ত স্থানে ইঁদুরের দৌড়াদৌড়ি লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে গুদামঘরে তাদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।

ইঁদুরের উৎপাদন খুব বেশি হলেই কেবল দিনের বেলায় দেখা যায়। তাদের দেখার জন্য রাতের বেলায় খুব শান্তভাবে খামারে প্রবেশ করে প্রায় ৫ মিনিট মতো নিশ্চুপ থেকে দেখলেই ইঁদুরের উপস্থিতি দেখা যাবে। ইঁদুরের গন্ধ এবং পোষাপ্রাণির লাফঝাঁপ বা অদ্ভুত আচরণ বা উত্তেজনা ইঁদুরের উপস্থিতি নির্দেশ করে। ইঁদুরের স্বভাবই হলো কাটাকুটি করা। কাঠের গুঁড়া, দরজা, জানালা, ফ্রেম, গুদামের জিনিসে ক্ষতির চিহ্ন দেখে এর আক্রমণের লক্ষণ বুঝা যায়। ঘরে বা তার পাশে ইঁদুরের নতুন মাটি অথবা গর্ত, ঘরের মধ্যে ইঁদুরের বাজে দুর্গন্ধ থাকলে বোঝা যাবে যে ইঁদুরের জনসংখ্যা বেশি।

ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ

ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের ২টি বিষয় থাকে। ১টি হলো ইঁদুর মেরে ফেলা এবং ফাঁদ দিয়ে ইঁদুর ধরা। অনেক পোল্ট্রি ফার্মে ইঁদুর পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। যারা ইঁদুর মারতে পারেন তাদের পুরস্কৃত করারও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। ব্রিডার ফার্মে বেশি ভাগ সময়ই বড় জাতের ইঁদুরগুলোকে ফার্ম কর্মীরা পিটিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে।

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই নতুন শেড নির্মাণের ক্ষেত্রে ইঁদুরের প্রবেশ এবং বংশ বিস্তার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা রেখে ডিজাইন করে শেড নির্মাণ করতে হবে। ইঁদুর প্রবেশের সকল পথ বন্ধ করতে হবে। ইঁদুর অন্ধকার বা লুকানো জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। তাই ইঁদুরের বিস্তার রোধ করতে অবশ্যই শেডের মধ্যের জায়গা পরিষ্কার এবং আলোযুক্ত রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কিছুই রাখা যাবে না। প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে যেন ইঁদুরের বসতি গড়ে উঠতে না পারে। শেডের মধ্যে নষ্ট অপ্রয়োজনীয় এবং ছিদ্রযুক্ত কোনো খাবার বা পানির পাত্র যেন থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

খামারে যদি ইঁদুরের বিস্তার লক্ষ করা যায় তাহলে নিম্নলিখিত উপায়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে- যেখানে ইঁদুরের ঘনত্ব কম থাকে সেখানে ফাঁদ ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। ইঁদুর বিশুদ্ধ ছোলা, মাছ, মাংস ইত্যাদি খেতে খুব পছন্দ করে। ফাঁদ ব্যবহারের সময় এসব পছন্দের খাবার দিয়ে রাখতে হবে। তবে একটা বিষয় খেয়াল করলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায় আর তা হলো আসল ফাঁদ দেয়ার পূর্বে কয়েক দিন ডেমো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। এতে করে ইঁদুর তাতে প্রবেশ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। পরে ঘরের কোনায় বা অন্যান্য বস্তুর আড়ালে দিয়ে রাখলে অনেক ইঁদুর ধরা পড়বে। যেসব স্থানে ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব বেশি সেসব স্থানে রাখতে হবে। বর্তমানে অনেক ধরনের ফাঁদ পাওয়া যায়। ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ইঁদুর পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়। ইঁদুরের গর্তে পানি ঢেলে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলা যায়। ইঁদুর ধরার জন্য গুদামে বা ঘরে এক প্রকার আঠা সাধারণত কাঠের বোর্ডে, মোটা শক্ত কাগজে, টিনে, লাগিয়ে ইঁদুর চলাচলের রাস্তায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এ ক্ষেত্রে বোর্ডের মাঝখানে লোভনীয় খাবার রাখতে হবে।

এ ছাড়াও ইঁদুর নির্মূলের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সবার সমন্বয়ে একসাথে সমন্বিত ইঁদুর দমন পদ্ধতি ব্যবহার করলে নিরাপদ থাকবে কৃষিজ ও প্রাণিসম্পদের সকল প্রজাতি। নিরাপদ হবে আমাদের প্রাণিজ আমিষ। উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ও খাদ্যের মান ভালো রেখে লাভবান হবেন খামারিরা। ইঁদুরের বিস্তার রোধ হলে রোগের বিস্তার কমবে খামারিদের চিকিৎসা খরচ কমবে এবং তারা লাভজনক অবস্থায় ফার্ম পরিচালনা করতে পারবে। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। য়                                                                                                                                                                                                                 

 

প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (এলডিডিপি), উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মোবাইল : ০১৭২৩৭৮৬৮৭৭, ই-মেইল : : mmrdvm10@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon